আস্সালামু আলাইকুম, ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম! ওয়েব ডিজাইন সার্ভিস পেতে যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ


ওজুর ফজিলত ও নিয়ম কানুন

আস্সালামু আলাইকুম, ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, মহান আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবাণীতে ভালই আছেন। আজকে আমরা জানবো ওযুর বিভিন্ন নিয়ম কানুন, ওযুর ফরজ, সূন্নাত ইত্যাদি। ওজুর ফজিলত অপরিসীম। প্রত্যেক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে, কুরআন তেলাওয়াত করতে ওজুর প্রয়োজন। 

ওজুর ফজিলত ও নিয়ম কানুন

নামাজ যেমন বেহেশতের চাবি তেমনি ওজু হচ্ছে নামাজের চাবি। ওজুর নিয়ম কানুন আমরা অনেকেই সঠিকভাবে জানি না। বিধায় আমাদের ওজু হয় না পরিশেষে নামাজও হয় না। আর নামাজ সঠিকভাবে আদায় না হলে নামাজের সাওয়াব পাওয়া যাবে না এবং কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তায়ালার সামনে বেনামাজি হিসেবে দাঁড়াতে হবে। তাহলে চলুন, জেনে নেই সঠিক পদ্ধতিতে ওজুর নিয়ম কানুন।

ওজুর ফরজঃ

ওজুর ফরজ হচ্ছে ৪টি।
যথাঃ

১। সমস্ত মুখমন্ডল ধোয়া।
২। হাতের কনুই পর্যন্ত ধোয়া।
৩। মাথা মাসেহ করা এবং
৪। পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধোয়া।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন,

হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াবে, তখন নিজেদের চেহারা কনুই পর্যন্ত হাত ধুয়ে নিবে। তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পায়ের টাখনুসহ (ধুয়ে নিবে)
[সূরা মায়েদা, আয়াতঃ ]

ওজুর সূন্নাতঃ

) মেসওয়াক করা।
) বিসমিল্লাহ বলে ওজু শুরু করা।
) দুই হাত কব্জি পর্যন্ত বার ধোয়া।
) ভালোভাবে গড়গড়াসহ কুলি করা।
) নাকে পানি দেয়া। পানি টান দিয়ে নাক ঝাড়া দেয়া।
) দাড়ি খেলাল করা।
) ডান পাশের অঙ্গগুলো আগে ধোয়া।
) অজুর অঙ্গগুলো ভালোভাবে ঘষামাজা করা।
) অজুর অঙ্গগুলো বার করে ধোয়া।
১০) ওজুর শেষে দোয়া করা।
১১) ওজু শেষে দুই রাকাত (তাহিয়্যাতুল ওজু) নামাজ পড়া।
[বুখারী, হাঃ ১৫৯,১৬৪,১৬৮,১৫৮,১৫৭মুসলিম, হাঃ ২৩৪,২৩৫, আবু দাউদ, হাঃ ১০১,১৪২,১৪৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাঃ ৩৬৩]

পরিপূর্ণ ওজু করার নিয়মঃ

প্রথমে বিসমিল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহ বলে ওজু শুরু করতে হবে। তারপর উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত বার ধোয়া। বার কুলি করা। বার নাকে পানি দেয়া এবং নাক ঝাড়া। বার সমস্ত মুখমন্ডল ভালোভাবে ধোয়া। বার মাথা মাসেহ করা এবং শেষে বার পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধোয়া।

ওজুর শেষে পড়ার দোয়াঃ

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তম রুপে ওজু করার পর এই দোয়া পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজায় খুলে দিবেন।

দোয়াটি হলোঃ

اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا الَّله وَحدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدً عَبْدُهُ وَ رَسُولُهُ.

অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি এক একক তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাঃ তাঁর বান্দা রাসূল।
[মুসলিম, /১২২ পৃঃ, আবু দাউদ, হাঃ ১৭০]

তিরমিযী শরীফের একটি হাদিসে নিচের দোয়াটির কথাও এসেছে,

اَللّٰهُمَّ اجعَلنِي مِنَ التَّوّّابِينّ وّ اجْعَلنِي مِنَ المُتَطَهِّرِين

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত তাওয়্যাবিনা, ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাত্বহহিরিন।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত বানাও।

ওজুর শেষে নিচের দোয়াটি পাঠ করলে, তা শুভ্র নিবন্ধে লিগে সিলগালা করে রাখা হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা নষ্ট করা হয় না।

سُبحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمدِكَ اَشهَدُ اَن لَّا اِلَهَ الّا اَنتَ اَستَغفِرُكَ وَ اَتُوبُ اِلَيكَ

উচ্চারণঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার পবিত্রতা প্রশংসা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।
[ত্বহাবী শরীফ, সহীহ তারগীব, হাঃ ২১৮]

ওজুর ফজিলত সম্পর্কে কিছু হাদীসঃ

১। উসমান রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরুপে ওজু করবে, তার গোনাহসমূহ তার শরীর থেকে বের হয়ে যাবে। এমনকি তার নখের নিচ থেকেও (গোনাহ) বেরিয়ে যাবে।
[মুসলিম, হাঃ ৬০১]

২। উসমান রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট শুনেছি তিনি বলেছেন, যে কোন ব্যক্তি যখন উত্তমরূপে ওজু করে নামাজ পড়ে তখন তার ওজুর সময় থেকে শুরু করে দ্বিতীয় নামাজ পড়া পর্যন্ত মাঝখানের সময়ের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
[নাসায়ী, হাঃ ১৪৬,১৭৪]

৩। আবু মালেক আশআরী রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, পবিত্রতা অর্জন করা হচ্ছে অর্ধেক ঈমান।
[মুসলিম, হাঃ ৫৫৬]

৪। আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাঃ দেখলেন এক ব্যক্তি (ওজুর সময়) পায়ের গোড়ালি ভালোভাবে ধোয়নি। তখন তিনি বললেন, () গোড়ালিগুলোর জন্য জাহান্নামের দুর্ভোগ।
[বুখারী, হাঃ ১৬৫, মুসলিম, হাঃ ৫৯৬]

৫। উকবাহ বিন আমের রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, কোন ব্যক্তি যখন উত্তমরূপে ওজু করে এরপর খালেছ দিলে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তখন তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।
[মুসলিম, হাঃ ৫৭৬, আবু দাউদ, হাঃ ১৬৯]

৬। যায়েদ বিন খালেদ জুহানী রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, কোন ব্যক্তি যখন উত্তমরূপে ওজু করে কোন ভুল না করে (খালেছ দিলে) দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তখন তার অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যায়।
[আবু দাউদ, হাঃ ৯০৫]

৭। উসমান রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে আমার এই ওজুর মতো ওজু করতে দেখলাম অতঃপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি এরকম ওজু করবে তার পূর্বেকার গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। এবং তার নামাজ মসজিদে চলার সাওয়াব অতিরিক্ত হবে।
[মুসলিম, হাঃ ৫৬৬]

৮। আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই আমার উম্মতকে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, তাদের ওজুর স্থানগুলো (পূর্ণিমার চাঁদের) ন্যায় চমকাতে থাকবে। সুতরাং যে চায় সে যেন তার চমক বৃদ্ধি করে নেয়।
[বুখারী, হাঃ ১৩৬, মুসলিম, হাঃ ৬০৩]

৯। আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাঃ! আপনার উম্মতের মধ্যে এখনো যারা পৃথিবীতে আগমন করেনি তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, বলতো দেখি যদি কালো রঙের ঘোড়ার দলের ভিতর পা কপাল সাদা দাগ বিশিষ্ট কোন লোকের ঘোড়া থাকে তাহলে কি সে তা চিনতে পারবে না? সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই পারবে হে আল্লাহর রাসূল সাঃ। রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, তারা কিয়ামতের মাঠে এই অবস্থায় আগমন করবে যে, ওজু করার কারণে তাদের হাত পা চমকাতে থাকবে।
[মুসলিম, হাঃ ৬০৭]

১০। ছাওবান রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, তোমরা (প্রত্যেক বিষয়ে) কর্তব্যনিষ্ঠ রও। আর কখনোই তাতে সফল হবে না। জেনে রেখ তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল হচ্ছে, নামাজ। আর মুমিন ব্যতিত কেউই ওজুর হেফাজত করবে না।
[ইবনে মাজাহ, হাঃ ২৭৭, হাকেম, হাঃ ৪৪৮]

পরিশেষে বলি, পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে দিতে ভুলবেন না। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে উত্তমরূপে ওজু করে ওজুর পরিপূর্ণ ফজিলতগুলো লাভ করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

ট্যগসমূহ

✅ #ওজুর_ফজিলত ✅ #ওজুর_নিয়ম ✅ #ওজুর_সঠিক_পদ্ধতি ✅ #ইসলামিক_শিক্ষা
✅ #নামাজের_পূর্বপ্রস্তুতি ✅ #ওজুর_দোয়া ✅ #তাহারাত ✅ #পবিত্রতা_রক্ষা ✅ #ইসলামিক_গাইড
✅ #ওজুর_সুবিধা

Sakoler IT

আমি মোঃ আজিজুল হাকিম। আমি একজন ওয়েব ডিজাইনার, ওয়েবসাইট ডিজাইনের সার্ভিস দিয়ে থাকি, প্রায় ৭ বছর যাবৎ উক্ত কাজে নিয়োজিত আছি।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post